ডিএনএ হলো সেই অণু, যার মধ্যে জীবের জিনগত তথ্য পাওয়া যায়। মা–বাবার বৈশিষ্ট্য সন্তানদের মধ্যে দেখার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান। অনেকেই মনে করেন, ১৯৫০-এর দশকে বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএ আবিষ্কার করেন। তবে সত্যিকার অর্থে ১৮৬৯ সালে সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসক ফ্রিদরিশ মিশ্চার এটি প্রথম শনাক্ত করেছিলেন। তিনি একে শনাক্ত করেছিলেন রক্তকণিকায় থাকা ‘নিউক্লিন’ হিসেবে। ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএ শনাক্ত করার আগপর্যন্ত আরও বেশ কয়েকজন গবেষক এ নিয়ে কাজ করেছেন। সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসক ফ্রিদরিশ মিশ্চারের শনাক্ত করা নিউক্লিনই পরবর্তী সময়ে ডিএনএ নাম পায়। ডিএনএ হলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের সংক্ষিপ্ত রূপ। জার্মান জৈবরসায়নবিদ আলব্রেখ্ট কোসেলকে এ নামকরণের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কোসেল পরবর্তী সময়ে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে দ্বিসূত্রক ডিএনএর গঠন আবিষ্কার করেন জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক। এ আবিষ্কারের জন্য তাঁরা দুজন ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে নোবেল পুরস্কার পেলেও কয়েক বছর পর অভিযোগ ওঠে, রসায়নবিদ রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের অনুমতি না নিয়ে তাঁরা তাঁর গবেষণার তথ্য ব্যবহার করেছেন। তাঁর গবেষণার সূত্রেই দ্বিসূত্রক ডিএনএ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন তাঁরা।
পৃথিবী নিজ অক্ষে এবং সূর্যের চারপাশে ঘোরে—এ ধারণা এখন খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে শুরুর দিকে বিজ্ঞানীদের দেওয়া এ ঘূর্ণন তত্ত্ব অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁরা বলছিলেন, পৃথিবী ঘুরছে—এটা কীভাবে সম্ভব? পৃথিবী ঘুরলে কি টের পাওয়া যেত না? তবে বিচক্ষণ বিজ্ঞানীদের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় পর তা ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা পায়। পৃথিবীর ঘূর্ণন তত্ত্ব আবিষ্কার ও ক্রমান্বয়ে এটিকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর ভূমিকা আছে। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে বলে প্রথম যাঁরা ধারণা দিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন প্রাচীন গ্রীক জ্যোতির্বিদ আরিসতারকুস। তবে তাঁর সময়ে এ তত্ত্ব ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, বিশ্বাস করা হতো যে মহাবিশ্বের কেন্দ্র, নক্ষত্র, গ্রহ ও সূর্য—সবাই আমাদের পৃথিবী গ্রহের চারপাশে ঘোরে। গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাসকে মহাবিশ্বের প্রথম সূর্যকেন্দ্রিক মডেল প্রস্তাব করার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। ১৫৪৩ সালে তিনি তাঁর মহান রচনা ‘অন দ্য রেভল্যুশনস অব দ্য হেভেনলি স্ফিয়ারস’ প্রকাশ করেন। এখানে তাঁর তত্ত্বগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি তত্ত্ব ছিল, পৃথিবী তার অক্ষের ওপর ঘূর্ণায়মান হওয়ার মাধ্যমে দিন ও রাত তৈরি হয়। কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মডেলটি পুরোনো টলেমীয় তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়। ওই তত্ত্বে দাবি করা হয়েছিল, পৃথিবী স্থির। কোপার্নিকাসের কাজগুলো তাঁর জীবদ্দশায় তেমন একটা পরিচিতি পায়নি। পরে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। গ্যালিলিও গ্যালিলি কোপার্নিকাসের তত্ত্বের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। তিনি একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছিলেন। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও শুক্র গ্রহের পর্যায় এবং বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদগুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
গ্যালিলিও এটাও প্রমাণ করেছিলেন, শুক্র গ্রহ যে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে, তা সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করার কারণে হয়েছে। জার্মান গণিতবিদ জোহানেস কেপলার সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলোর কক্ষপথের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একাধিক সূত্র তৈরি করেছিলেন। এই সূত্রগুলো আজও প্রাসঙ্গিক। কোপার্নিকান তত্ত্বের সঙ্গে সংগতি রেখে যথার্থভাবে গ্রহের গতিবিধি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য এ সূত্রগুলো গাণিতিক সমীকরণ দেয়।